SSH অ্যাক্সেস কাকে বলে? সার্ভারে SSH এক্সেস করবেন কীভাবে ?
যারা ওয়েব হোস্টিং ও সার্ভার ম্যানেজমেন্টের সাথে জড়িত তারা নিশ্চয় “SSH এক্সেস” শব্দটির সাথে পরিচিত। SSH এক্সেস সাধারণত এ্যাডমিন, ডেভেলপার ও যারা নিজেদের হোস্টিং ও সার্ভারে আরো বেশি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চান তাদের প্রয়োজন হয়।
SSH অ্যাক্সেস বলতে কী বোঝায়?
SSH অ্যাক্সেস অর্থ “সিকিউর শেল অ্যাক্সেস” (Secure Shell access) । এটি একটি ক্রিপ্টোগ্রাফিক নেটওয়ার্ক প্রোটোকল যা একটি অনিরাপদ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে একটি কম্পিউটার বা সার্ভারে একজন ইউজারকে নিরাপদে রিমোট অ্যাক্সেস এবং পরিচালনার অনুমতি দেয়। সার্ভার কম্পিউটারে অনেকগুলো “পোর্ট” থাকে যেগুলোর মাধ্যমে সার্ভারের বিভিন্ন সার্ভিসের সাথে ইউজারদেরকে কানেক্ট করা হয়, যেমন port 80 ব্যবহৃত হয় http কানেকশনের জন্যে অর্থাৎ যে কানেকশন দিয়ে একটি ওয়েবসাইটের ভিজিটরগণ ব্রাউজারের মাধ্যমে কানেক্ট হয়ে ওয়েবসাইটটি দেখতে পান, আবার port 21 ব্যবহৃত হয় FTP কানেকশনের জন্যে অর্থাৎ যে পোর্ট দিয়ে ওয়েবসাইটের মালিক তার সাইটের ফাইলগুলো সার্ভারে আপলোড করে থাকেন। এইরকমই একটি পোর্ট ২২ (port 22) ব্যবহৃত হয় সিকিউর শেল কানেকশনের জন্যে, এটাকে সিকিউর বলা হয় এজন্যে যে এই কানেকশনের মাধ্যমে কানেকটেড ইউজার তার নিজ কম্পিউটার থেকে সার্ভার কম্পিউটারে যে তথ্য/ফাইল আদান-প্রদান করেন তা এনক্রিপটেড (Encrypted), যার ফলে হ্যাকাররা সেই তথ্য পড়ে ফেলতে পারে না। SSH অ্যাক্সেস লিনাক্স বা ইউনিক্স-ভিত্তিক সিস্টেমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সাধারণত সব ওয়েব হোস্টিং প্রোভাইডার শেয়ার্ড ও ক্লাউড হোস্টিংয়ের সব প্যাকেজে SSH এক্সেস দেয় না, তবে VPS ও ডেডিকেটেড সার্ভারের ক্ষেত্রে শেল অ্যাক্সেস দেয়া হয়।
SSH অ্যাক্সেসের ধরন
সাধারণত পাশওয়ার্ড ও Key ভিত্তিক এই দুই পদ্ধতিতে শেল অ্যাক্সেস করা হয়। Key ভিত্তিক লগিন খুবই সিকিউর ও হ্যাকপ্রুফ হলেও সাধারণ ইউজারদের জন্য key তৈরি ও সংরক্ষণ করা জটিল হওয়ায় পাশওয়ার্ড ভিত্তিক লগিনই বেশি ব্যবহৃত হয়। আর SSH অ্যাক্সেস সাধারণত দুই ধরনের ‘ইউজার রোলে’ (User role) হয়, একটি ‘সুপার ইউজার’ (super user) বা ‘রুট ইউজার’ (root user) এবং আরেকটি সাধারণ ইউজার হিসাবে। ‘সুপার ইউজার’ বা ‘রুট ইউজার’ অর্থ তিনি সার্ভারের মালিক বা ফুল এ্যাডমিনিস্ট্রেটর, তিনি সার্ভারে যে কোন ধরনের পরিবর্তন আনয়নে সক্ষম, অন্যদিকে ‘সাধারণ ইউজার’ শুধুমাত্র ততটুকুই প্রবেশাধিকার পায় ‘রুট ইউজার’ তাকে যতটুকু অনুমতি দেয় এজন্য এটাকে Jailed SSH -ও বলা হয়, কারণ ইউজার তার জন্যে নির্ধারিত ডাইরেকটরির বাইরে যেতে পারে না।
SSH অ্যাক্সেস ও রুট অ্যাক্সেসের পার্থক্য
SSH অ্যাক্সেস ও রুট অ্যাক্সেসের পার্থক্য হলো SSH অ্যাক্সেস অর্থ সার্ভারে সিকিউর শেল অ্যাক্সেস, আর Root অ্যাক্সেস অর্থ ‘ফুল এ্যাডমিনিস্ট্রেটর’ হিসাবে SSH এ অ্যাক্সেস।
SSH এ অ্যাক্সেস করে কী কী করা যায়
কেউ যদি ফুল এ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসাবে SSH অ্যাক্সেস করেন তাহলে তিনি সার্ভারে প্রোগ্রাম ইন্সটলেশন রিমুভ-সহ যেকোন ধরনের পরিবর্তন আনয়ন করতে পারেন, আর কেউ যদি সাধারণ ইউজার হিসাবে SSH অ্যাক্সেস করেন যা সাধারণত শেয়ার্ড ও ক্লাউড হোস্টিং প্রোভাইডারগণ তাদের বিভিন্ন প্যাকেজের সাথে দিয়ে থাকেন তাহলে তিনি নিম্নে উল্লেখিত বিষয়াদি খুব সহজে সম্পন্ন করতে পারেন।
- নিরাপদে বড় ফাইল আপলোড,
- wget কমান্ডের মাধ্যমে অন্য সার্ভার থেকে দ্রুত ফাইল ডাউনলোড, বিশেষ করে কেউ যদি ৫০০ জিবি সাইজের ওয়েবসাইট এক হোস্ট থেকে আরকে হোস্টে নিতে চান তাহলে সেই ৫০০ জিবি ফাইলটি খুব সহজেই SSH এর মাধ্যমে দ্রুত নতুন সার্ভারে ট্রানস্ফার করা যায়,
- খুব সহজে বড় সাইজের ডাটাবেজ ইমপোর্ট এক্সপোর্ট,
- খুব সহজে অনেক ফাইল zip ও unzip,
- ওয়েবসাইট ও সার্ভার প্রসেস ও পারফরমেন্স মনিটর ইত্যাদি।
SSH অ্যাক্সেস করবেন কীভাবে?
SSH এ লগিন করার জন্যে আপনার কম্পিউটার একটি SSH Client অ্যাপ বা সফটওয়্যার ইনস্টল করতে হবে। সাধারণত উইন্ডোজ ও MacOS এর জন্যে Putty, লিনাক্সের জন্যে OpenSSH জনপ্রিয় দুটি সফটওয়্যার। তবে Putty তে সেভ অপশন না থাকায় বর্তমানে Bitvise এ্যাপটি বহুল ব্যবহৃত যা Putty এর ডাউনলোড পেজ থেকেই ডাউনলোড করা যায়, বা সরাসরি এই লিংকে দেখুন। নিচে Bitvise থেকে কীভাবে SSH এ লগিন করা যায় দেখানো হলো।
প্রথমে Bitvise এ্যাপটি ওপেন করুন এরপর উপরের চিত্রে লাল চিহ্নিত স্থানে আপনার সার্ভার IP পেস্ট করুন,
নীল চিহ্নিত স্থানে ইউজারনেম লিখুন, রুট ইউজার হলে root আর অন্য কোন নেম হলে সেটা,
সবুজ চিহ্নিত স্থানে পাশওয়ার্ড লিখুন,
কালো চিহ্নিত স্থানে SSH পোর্ট নাম্বার, সাধারণত ডিফল্ট পোর্ট নাম্বার হয় 22 কিন্তু নিরাপত্তার জন্যে অনেকে এই পোর্ট নাম্বার পাল্টিয়ে নিয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে যিনি আপনাকে SSH লগিন ডিটেইলস সরবরাহ করেছেন তিনি এটা বলে দিতে পারবেন, এরপর
হলুদ চিহ্নিত স্থানে ক্লিক দিয়ে আপনার তথ্যগুলো সেভ করুন, তবে মনে রাখবেন এটা যদি আপনার ব্যক্তিগত এবং পাশওয়ার্ড প্রোটেকটেড কম্পিউটার হয় তাহলেই Bitvise এ SSH এর তথ্য সেভ রাখুন অন্যথায় নয়,
এবার সব শেষে নিচে তীর চিহ্নিত Log in বাটনে ক্লিক দেয়ার পর সব তথ্য ঠিক থাকলে স্ক্রীণে একটি মেসেজ আসবে সেখানে Accept & Save এ ক্লিক করলে আপনি সার্ভারের SSH সেশনে কানেক্ট হয়ে যাবেন এবং আপনার সামনে নিচের চিত্রের মতো একটি কমান্ড লাইন উইন্ডো আসবে এই উইন্ডোতেই আপনাকে SSH এর বিভিন্ন কমান্ড লিখে আপনার কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
SSH ব্যবহারে সতর্কতা
যারা রুট ইউজার হিসাবে SSH ব্যবহার করছেন তাদের অবশ্যই কয়েকটি বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যান্ত জরুরী! কারণ হ্যাকার’রা ‘SSH লগিন’ হ্যাক করার বিভিন্ন ধরনরে কৌশল অবলম্বন করে থাকে, আর তারা সফল হয়ে যাওয়া মানে আপনার সার্ভার তখন সম্পূর্ণ তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়া! এজন্যে অনেক ‘এ্যাডভান্সড ইউজার’ পাশওয়ার্ড নির্ভর SSH লগিন বন্ধ রেখে Key নির্ভর লগিন ব্যবহার করেন, তবে এই পদ্ধতিটি নতুন ইউজারদের জন্যে একটু জটিল আর key হারিয়ে ফেললে আপনি নিজেই আর সার্ভারে লগিন করতে পারবেন না! তাই পাশওয়ার্ড নির্ভর SSH ব্যবহারকারীগণ সার্ভারে ফায়ারওয়াল ব্যবহার করুন। আপনি যদি CyberPanel, CloudPanel, cPanel এর মতো কন্ট্রোল প্যানেল ব্যবহার করেন তাহলে তাদের ইনস্ট্রাকশন অনুযায়ী ফায়ারওয়াল এ্যাক্টিভ করে নিন, SSH এর ডিফল্ট পোর্ট 22 পাল্টে 40550 থেকে 65535 এর মধ্যে যেকোন একটি সেট করে নিন অথবা আপনার ফায়ারওয়াল থেকে পোর্ট 22 এ লগিন ডিজেবল করে দিন, যখন আপনার রুট লগিন প্রয়োজন পড়বে তখন এটা এনাবল করে নিয়ে কাজ শেষে আবার ডিজেবল করে দিন, SSH সিকিউর করার এই পদ্ধতিটিই সব চাইতে সহজ।